রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, এ সরকারকে আমরা সময় দিতে চাই। তবে মনে রাখতে হবে এক এগারোর মতো কোনো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। এই সরকারের দায়িত্ব হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসি ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ভিপি নুর বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে তার দায়ে শেখ হাসিনাকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এই সরকার যেভাবে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে, একইভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে, এ দাবি আন্তর্জাতিকভাবেও তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আটক করে রিমান্ডে নিলে হাজার হাজার অবৈধ টাকার সন্ধান পাওয়া যাবে। এখনও আওয়ামী লীগের কাছে কালো টাকা রয়েছে, যা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আজিজ-বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজ অফিসার ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের আটক করতে হবে, এদেরসহ সকল এমপি মন্ত্রীদের অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে কীভাবে পালিয়ে গেলো? এতো ছাত্র- জনতাকে হত্যার পরে কেউ ছাড় পেতে পারে না। অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আবারও বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদ, শেখ হাসিনা ফিরে আসুক, তেমন রাষ্ট্র আমরা গঠন হতে দেব না। আমরা চাই উন্নত গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের দিনব্যাপী প্রতিনিধি সভা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাষ্ট্র সংস্কারে গণঅধিকার পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সরকার কী করতে চায়, ৩ মাস, ৬ মাসের রোডম্যাপ, প্ল্যান সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেকোনো সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রাষ্ট্র সংস্কার হতেই হবে, তাদের করতেই হবে। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া আমরা তাদের বিদায় দেব না।
রাশেদ বলেন, এর আগে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল, আমরা রাজপথে নেমে আওয়ামী চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছি। বিচার বিভাগীয় ক্যু, আনসার ক্যু সব নস্যাৎ করেছে ছাত্র-জনতা। ভবিষ্যতেও সব ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আমাদের নেতৃবৃন্দরা প্রাণপণ লড়াই করেছে। আমাদের ৯ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে, অসংখ্য গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের বিপ্লব কিন্তু এখনো সমাপ্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও শেখ হাসিনা ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে , সেই চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, জসিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, গণনেতা প্রাইম কাদের, মিলন মিয়া,যুবনেতা হোসাইন নুর,জাহাঙ্গীর, ছাত্রনেতা সম্রাট প্রমুখ।