দেহের বাড়তি ওজন কমাতে সাধারণ নিয়ম// দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মধ্যেই নানানভাবে দেহের বাড়তি ওজন কমানো যেতে পারে। ব্যায়াম, ডায়েট বা অন্যান্য পদ্ধতি- ওজন কমানোর জন্য বাড়তি সময় বের করা এই ব্যস্ত জীবনে হয়ে ওঠে না। বরং দৈনিক জীবনযাপনের ধারায় কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করে দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা সম্ভব। পাশাপাশি বাড়তি ওজন কমানো যায়।
প্লেটের আকার ছোট করা
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ রিটায়ার্ড’য়ের করা গবেষণার ফলাফল বলে খাবার পাত্রের আকার ছোট রাখলে খাবারও কম খাওয়া হয়। কারণ প্লেট ভর্তি খাবার নিলেও জায়গার স্বল্পতায় বেশি খাবার ওঠানো যায় না। প্রধান বিষয় হল খাওয়ার পরিমাণ কমানো।
খাওয়া নিয়ন্ত্রণ
যখনই ১২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৯ ইঞ্চি প্লেট ব্যবহার করা হবে, পরিবর্তন শুরু হবে সেখান থেকেই।
খাবার পরিমাপের জন্য কাপ বা চামচ ব্যবহারের পরামর্শ দেয় ‘দি ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’।
দ্রবণীয় আঁশ
দেহে চর্বি ও চিনি শোষণের মাত্রা কমানোর সেরা উপায় হল দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী- এই ধরনের খাবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখতে পারে।
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে- মটর, তিসির বীজ, ডুমুর, ওটস, গাজর, টক ফল, বার্লি, বাদাম, ব্রকলি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
রাতে খাওয়ার পর হাঁটা
বলা হয় সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হল হাঁটা। আর রাতের খাওয়ার পর হাঁটতে পারলে স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা যায়। ‘এইচসিএ ফ্লোরিডা হেল্থকেয়ার’য়ের তথ্যানুসারে রাতে খাওয়ার পর হাঁটলে শুধু ওজনই কমে না, অন্যান্য উপকারও মেলে।
খাওয়ার আগে পানি পান
পানি দেহের কার্যক্রমে নানানভাবে কাজ করে। আর অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন খাওয়ার আগে পানি পান উপকারী। ওয়েবএমডি’তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- খাওয়ার আগে পানি পানে পেট ভরা অনুভূতি দেয়। ফলে অতিভোজনের ঝুঁকি কমে।
প্রক্রিয়াজাত কার্বস বাদ
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া ভালো না। আর সেটা মিষ্টি হলে তো কথাই নেই। এ কারণে ক্যান্ডি, চকলেট, সাদা রুটি বা পাউরুটি, চিপস ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেডিকেলনিউজটুডে ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে- প্রক্রিয়াজাত চিনি জীবন থেকে বাদ দিলে রক্তচাপ, দীর্ঘদিনের প্রদাহ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
প্রোটিন গ্রহণ
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রোটিন বা আমিষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুক্তরাজ্যের ‘দি ইন্সটিটিউট ফর অপটিমাম নিউট্রিশন’ জানায়- কার্বোহাইড্রেইটস কম আর আমিষ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে ওজন কমানোতে ভূমিকা রাখে। কারণ ব্যায়াম বা অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে ক্যালরি খরচ হওয়ার পর, সেটা পূরণ করতে দেহ চর্বি পোড়ানো শুরু করে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং
এর মানে হল নির্দিষ্ট সময়ের পর আর না খাওয়া। যেমন- সকাল আটটা থেকে রাত আটটা’র মধ্যে সাধারণ খাওয়া দাওয়ার পর আর কোনো খাবার গ্রহণ না করা। পরেরদিন সকাল আটটায় আবার নাস্তা দিয়ে শুরু।
খাবার থেকে না পেলে কার্বোহাইড্রেইটস’য়ের চাহিদা মেটাতে দেহ চর্বি পোড়ায়। জন হপকিন্স’য়ের নিউরোসায়েন্স ও উপোস-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্ক ম্যাটসন এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন ‘মেটাবলিক সুইচিং’।
খাবার গ্রহণ থেকে বিরত না থাকা
উপোস থাকা বিষয়ক তথ্য পাওয়ার পর, খাবার খাওয়া থেকে বিরত না থাকার বিষয়টা গোলমেলে লাগতে পারে। আসল বিষয় হল সাধারণ সময়ের মধ্যে যে খাবার খাওয়া হয় অর্থাৎ তিন-চার বেলার স্বাভাবিক খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।
নর্থ ক্যারোলিনা’র ‘পিডমন্ট হেল্থকেয়ার’ জানাচ্ছে- সাধারণ সময়ে খাবার না খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, ফলে ক্ষুধা বেশি পায়, যে কারণে খাওয়া বেশি হয়।
চিনি কম
একেবাইরেই চিনি খাওয়া বাদ দেওয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনি কৃত্রিম চিনি খাওয়া নিরাপদ না। তাই চিনির চাহিদা পূরণে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া স্যান দিয়েগো’র করা গবেষণায় বলা হয়, যখনই সম্ভব প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণ করা উপকারী। উৎস হিসেবে রয়েছে- নানান ধরনের ফল, মধু, মিষ্টি সবজি।
ধীরে চিবিয়ে খাওয়া
ভালো মতো চিবিয়ে খেলেও ক্যালরি পোড়ে। প্রাথমিকভাবে নানান গবেষণায় দেখা গেছে- ধীরে চিবানোর ফলে প্রতিবার খাবার খাওয়াতে ১০ ক্যালরি পোড়ে।
বেশি বেশি ফল সবজি
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র তথ্যানুসারে যত বেশি সম্ভব প্রাকৃতিক টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণে এসবে থাকা জলীয় পদার্থ ও আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দিতে পারে। ফলে খাওয়া কম হয়।
তাই বিকালের নাস্তায় অন্য কিছুর চাইতে ফল খাওয়া ওজন কমাতে উপকারী ভূমিকা রাখে।