কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. তানজিম সারোয়ার নির্জনকে (২৩) টাঙ্গাইলে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জানাজা শেষে সদর উপজেলার করের বেতকা গ্রামের বোয়ালী সামাজিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তরুণ এই সেনা কর্মকর্তাকে হারিয়ে গ্রামে মাতম চলছে।
তানজিম সরোয়ার নির্জন টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামের সারওয়ার জাহানের ছেলে। এরআগে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চার টার দিকে নিহত সেনা কর্মকর্তার মরদেহ হেলিকপ্টরযোগে টাঙ্গাইল পৌঁছায়। এদিন বিকাল সাড়ে চার টার দিকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে লেফটেন্যাণ্ট তানজিম সরোয়ার নির্জনের মরদেহ টাঙ্গাইলে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শেষবার এক নজর দেখতে টাঙ্গাইল জেলা সদরের হেলিপ্যাডে ভির জমায়। পরে করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকায় নেওয়া হলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা নামাজের জন্য নেওয়া হয়।
মরহুমের জানাজা নামাজে জেলা বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেয়। পরে বোয়ালী সামাজিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয় এবং স্বশস্ত্র গার্ড অব অনার প্রদান করে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতি প্রতিরোধে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। ওই অভিযানে গিয়ে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যাণ্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন নিহত হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তানজিম সারোয়ার নির্জন পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।
লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার করের বেতকা গ্রামের সারোয়ার জাহান ওরফে দেলোয়ারের ছেলে। পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেফটেন্যান্ট তানজিম ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ২০২২ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশনড লাভ করেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় অভিযানে গিয়ে ডাকাতের হামলায় তিনি নিহত হন।
বিকেলে তানজিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা সারোয়ার জাহান শোকে পাথর। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তানজিমের মা নাজমা বেগম। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে সারোয়ার জাহান বলছিলেন, ‘এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। আর যেন কোনো বাবার এমন শোক পেতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তানজিমই ছিল আমার একমাত্র ছেলে।’
তানজিম নিহতের খবর এলাকায় জানাজানি হলে সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজনসহ এলাকাবাসী। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হেলিকপ্টারে করে তানজিমের লাশ টাঙ্গাইল শহরের হেলিপ্যাডে আনা হয়। সেখান থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে লাশ সদর উপজেলার করের বেতকা গ্রামে নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
তানজিমের মামাতো ভাই মীর পলাশ জানান, ছোটবেলা থেকেই তানজিমের ইচ্ছা ছিল সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল। কিন্তু ডাকাতের আক্রমণে সব শেষ হয়ে গেল।
বিকেলে বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে তানজিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। পরে করের বেতকা কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।