টাঙ্গাইল জেলা শহরের সাবালিয়া এলাকায় বনফুল টাওয়ারে চাঁদাবাজি’সহ বিভিন্ন অভিযোগে উজ্জ্বল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে এক প্রবাসীর মা। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ৩অক্টোবর দুপুরে ওই টাওয়ারের ডেভেলপার ইতালি প্রবাসী একেএম কাইয়ুম কবীর ছোটনের পক্ষে তার মা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লতিফা বেগম (৭৫) বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায় নির্মাণাধীন ১০তলা বনফুল টাওয়ারের কাজ শেষ না হতেই কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়। ওই সময় শম্ভু চক্রবর্তীর ছেলে পুলিশের চাকুরিচ্যূত কনস্টেবল উজ্জল চক্রবর্তী টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট কিনেন। এরপর তিনি টাওয়ারের ডেভেলপার একেএম কাইয়ুম কবীর ছোটনের কাছ থেকে এক প্রকার প্রভাব খাটিয়ে টাওয়ারের উন্নয়নের জন্য নানা মালামাল ক্রয়ে তদারকির দায়িত্ব নেন। উন্নয়ন কাজে প্রয়োজনীয় দামের চেয়ে বেশি দামে মালামাল ক্রয় করায়, তার সঙ্গে ডেভেলপারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে উজ্জল চক্রবর্তী বনফুল টাওয়ার উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। এরপর থেকে উজ্জল চক্রবর্তী নানা ছলছুঁতোয় ডেভেলপারের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করেন। কয়েক দফায় তিনি দাবিকৃত চাঁদার টাকা আদায়ও করেন। পরে ধারাবাহিকভাবে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন এবং টাকা দেওয়ার পর মীমাংসা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রবাসীর মা বলেন, বিগত সরকারের শেষ সময়ে উজ্জল চক্রবর্তী ডেভেলপারের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় টাওয়ারের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেন। উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও মিস্ত্রিদের মারপিট করে তাড়িয়ে দেন। তারপর থেকে টাওয়ারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। টাওয়ারের অন্য বাসিন্দারাও তার দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, উজ্জল চক্রবর্তীর চাঁদাবাজি, হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ভয়ে ডেভেলপার একেএম কাইয়ুম কবীর ছোটন ইতালি থেকে দেশে আসতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো জানান, উজ্জল চক্রবর্তী একজন প্রতারক ও নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে ভূয়া মামলা দিয়ে চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসা সহ প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বনফুল টাওয়ারের অন্যান্য ফ্ল্যাট বাসিন্দা ও মহল্লায় তার অসংখ্য ভূক্তভোগী রয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বনফুল টাওয়ারের ভুক্তভোগী ফ্ল্যাটের মালিকরা ও উজ্জল চক্রবর্তীর দ্বারা পুলিশি হয়রানির স্বীকার হওয়া মহল্লাবাসীরা সম্মিলিতভাবে বিল্ডিংয়ের সেক্রেটারী উজ্জলের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তার অপকর্মের জন্য শান্তি ও ভবন পরিচালনা কমিটি থেকে তার প্রত্যাহার দাবী করেন। এছাড়াও সদর থানা’সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো জানান, বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উজ্জল চক্রবর্তী ডেভলপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ তুলে। ডেভেলপার ওই প্রবাসীর মা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিটি অভিযোগের যে ব্যাখা তুলে ধরেন, তা হলো
১। টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রকৌশলী কর্তৃক ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর অনুমতি স্বাপেক্ষে পৌর মেয়র ৬ অক্টোবর প্ল্যান মঞ্জুর করেন।
২। ছাপ্লাইয়ের পানির ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৩। সরকারী ভাবে গ্যাসের অনুমোদন না থাকায় প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কিনে দেওয়া হয়েছিল সে ক্ষেত্রেও উজ্জল চক্রবর্তী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এছাড়া জমির মালিকের নামে একটি চুলার অনুমোদন ছিল সেটা চক্রান্ত করে নিজে ব্যবহার করছে।
৪। সাব স্টেশন ক্রয় করা হয় বে-পাওয়ার টেকনোলজী লিমিটেড কোম্পানীর কাছ থেকে। 200 KVA (11/0.415 KV) বিগত ০১/০৩/২০১৮ ইং তারিখ এবং টাঙ্গাইল PDB মাধ্যমে স্থাপন করা হয়।
৫। ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক অনুমোদনের জন্য সাবমিট করার পর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ আল খালিদ টাঙ্গাইল কর্তৃক বিগত ২০১৯ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারি সুপারিশ ক্রমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ঢাকা কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদিত হয় বিগত ২০১৯ সালের ২১ মার্চ।
৬। ২টি লিফট স্থাপন করা হয় বিগত ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি, যা ক্রয় করা হয় নেপচুন লিফট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর নিকট থেকে (৩৮০ ভোল্ট/৩ P ফেজ/৪০ অ্যাম্পিয়ার)।
৭। সোলার ক্রয় করা হয় ৩০/০৪/২০১৯ ইং তারিখ ৩৩০ W। এই সোলার স্থাপন করতে না দিয়ে নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছে।
৮। আর্থিং কপার ক্রয় করা হয় বে-পাওয়ার টেকনোলজি লিমিটেড থেকে বিগত ৩০/০৩/২০১৯ ইং এবং স্থাপন করা হয়। ৯। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্বরুপ প্রতি ফ্ল্যাটে ২টি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়।
১০। বনফুল টাওয়ারে জেনারেটর স্থাপনের নিমিত্তে উজ্জল চক্রবর্তী ডেভলপারের কাছ থেকে জোড়পূর্বক মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে নিজের নামে উক্ত জেনারেটর ক্রয় করে ভবনে স্থাপন করে। ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উজ্জল চক্রবর্তীর বিভিন্ন অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এছাড়াও বনফুল টাওয়ারের পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারির পদ থেকে তাকে প্রত্যাহারের দাবী জানান।
এ সকল বিষয়ে জানতে উজ্জল চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন আগে ফ্ল্যাট কিনলেও এখন পর্যন্ত ডেভেলপার বুঝিয়ে দেন নাই। তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লতিফা বেগমের সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে মোঃ রাসেল কবির, নাতি রাফিউল সিয়াম ও জিহান তালুকদার’সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সহ বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।