টাঙ্গাইল পৌরসভার গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই লাইনের পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বড় সংখ্যক পৌরবাসী। টাঙ্গাইল পৌরসভার ০৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া এলাকার বাসিন্দা রহম আলী বলেন, তার বাসায় পৌরসভার সাপ্লাই পানির সংযোগ আছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরেসাপ্লাই লাইনে পানি আসেনা, তবুও বিল জমা হচ্ছে প্রতি মাসেই।
বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গ্রাহকের একই অভিযোগ। পৌরসভা সুত্রে জানা যায়, পৌরসভার তিনটি উচ্চ জলাধার ও চারটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আছে। কলেজ পাড়া এলাকায় একটি উচ্চ জলাধার ও দুইটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বাগান বাড়ি এলাকায় একটি উচ্চ জলাধার, সাবালিয়া এলাকায় একটি উচ্চ জলাধার ও একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, কাগমারী এলাকায় একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। এছাড়াও জেলা সদর মাঠ সংলগ্ন একটি পানির ট্যাংক রয়েছে, এটাতেও পানি সরবরাহ করে টাঙ্গাইল পৌরসভা। টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২, ৪, ৮, ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডে পানির তেমন কোনো সাপ্লাই লাইন নেই। ১, ৩, ৫, ৭, ১২, ১৫ ও ১৭ নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকায় পানির সাপ্লাই লাইন আছে, ৬, ১১, ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের পুরো এলাকায় পানির সাপ্লাই লাইন থাকলেও পানির চাপ খুবই কম।
পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী এ. এইচ. এম জাহাঙ্গীর আলম খান এর কাছ থেকে জানা যায় রেজিস্ট্রার অনুযায়ী গ্রাহকের সংযোগ সংখ্যা ৮১৭৬, তবে চালু আছে ৪৫০০ টি। প্রতিমাসে ০.৫ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগের বিল ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগের বিল ৬০০ (ছয় শত) টাকা, ১ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগের বিল ১৬০০ (এক হাজার ছয়শত) টাকা, ১.৫ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগের বিল ৩৬০০ (তিন হাজার ছয়শত) টাকা এবং ২ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগের বিল ৭২০০ (সাত হাজার দুইশত) টাকা। পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্রে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ১৭ জন এবং দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী ৩৩ জন। গত জুন মাসের পানি সরবরাহ শাখার চাহিদা ও আদায় বিবরণী থেকে জানা যায় বর্তমানে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার, কিন্তু প্রতিদিন পানি সরবরাহ করা হয় ৯৩ লাখ লিটার, ফলে প্রতিদিন পানির ঘাটতি থাকে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি।
প্রতিদিন পানি পরিশোধন করা হয় ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি এবং ব্যাক ওয়াস করতে প্রয়োজন হয় ১৫ লাখ লিটার পানি। বিভিন্ন ব্যাসের পাইপ লাইন রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার। বিভিন্ন ব্যাসের সংযোগ রয়েছে ৪৫০০টি এবং ০.৫ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ রয়েছে ৭৪৮২ টি। পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম জাহাঙ্গীর আলম খান জানায়, চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হলে উচ্চ জলাধার ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাড়াতে হবে।
সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন সেফ লাইফ এর সভাপতি টাঙ্গাইল পৌরসভার পূর্ব আদালত পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুবেল মিয়া জানান, ঠিকমত পানি আসে না এবং অল্প পরিমান আসলেও সেই পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত, একারনে তার বাসার পানির সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। দেওলা এলাকার তুষার আহমেদ জানায়, পৌরসভার সাপ্লাই পানির সংযোগ তারা পাননি, পৌরসভার পক্ষ থেকে নাগরিক সুবিধার মধ্যে সাপ্লাই পানি অন্যতম, সাপ্লাই লাইনের পানি না পাওয়ার কারনে পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পানির লাইন না পাওয়া অনেকেই বলেন প্রতিবেশীদের কাছে মাঝে মাঝেই শুনি পৌরসভার সাপ্লাই লাইনের পানি পরিমান মত আসে না।
আকুর টাকুর পাড়ার রাইহান মিয়া বলেন, গভীর নলকূপ স্থাপন করা অনেক ব্যয়বহুল, সচরাচর সবার পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। পৌরসভার উচ্চ জলাধারে গভীর নলকূপের পানি পরিশোধন করে তারপর সাপ্লাই করা হয়ে থাকে বলে আমরা সাপ্লাই পানি নিতে আগ্রহী, কিন্তু পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সরবরাহ নেই। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো: শিহাব রায়হান বলেন ” আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর উপলব্ধি করি যে বিভিন্ন এলাকায় পানির চাহিদা থাকা স্বত্বেও পৌরসভা থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নাই। এ লক্ষ্যে আমি সরকারি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি এবং ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন প্রোজেক্ট যেটা এ বছরের শেষ নাগাদ শুরু হবে, টাঙ্গাইল শহরে সেটার আওতায় ২০ কিলোমিটার পানির পাইপ লাইন তৈরি করা হবে এবং আরও চারটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরী করা হবে। আশা করি এই প্রকল্প যখন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে তখন শহরবাসীর আর এই পানির সমস্যা থাকবে না।







