কিশোরীর প্রথম মাসিকে করণীয়। হঠাৎ স্কুলের জামার পেছনে লালচে দাগের উপস্থিতি। এক বিব্রতকর পরিস্থিতি দিয়ে শুরু হয় কিশোরীর প্রথম মাসিক। মেয়েরা তাদের মায়ের কাছে এ ব্যাপারে কথা বলতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মেয়েকে কাছে বসিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, অস্বস্তি ও সমস্যা মনোযোগ দিয়ে মায়ের শোনা উচিত। আপনি নিজের জীবনে মাসিকের প্রথম অভিজ্ঞতা মেয়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন।
শারীরিক যত্নের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মাসিক সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেলে এবার মা ও মেয়ে মিলে মাসিকের সময় ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলতে পারেন। এ সময় ব্যবহার্য প্যাড, টেম্পেল, নরম সুতি আন্ডারগারমেন্ট এগুলো যত্ন করে গুছিয়ে ফেলুন এবং এগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সম্পর্কে জানিয়ে দিন আপনার কিশোরী মেয়েক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যদি না থাকে, তাহলে কিন্তু এই সময় থেকেই মূত্রনালি ও জরায়ুর সংক্রমণের বীজ বপন হতে পারে আপনার কিশোরীর কোমলমতি শরীরে।
আপনার কিশোরী মেয়ের দিনটি কেমন হবে? প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা অন্তর অন্তর স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড পরিবর্তন করা যাবে। এ ছাড়া যতবার প্রয়োজন ততবারই পরিবর্তন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে স্কুলগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
মাসিকের সময় খাদ্যাভ্যাসের কোন কোন দিকে আপনি গুরুত্ব দেবেন? সুষম খাবার এবং সেই সঙ্গে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের দিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ এই সময় মাসিকের রক্তের সঙ্গে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মনে রাখবেন, বিশ্রাম নেওয়া এবং সুষম খাবার খাওয়া এই সময়ে আপনার কিশোরীর শরীরের ঘাটতি পূরণে অনেক বেশি সহায়ক।
মাসিকের তারিখটি মনে রাখা কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। আর এই অভ্যাসটি শুরু হোক একেবারে প্রথম থেকে। মায়েরা কিন্তু মেয়েদের এই ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করতে পারেন। প্রথম এক বা দুই বছরে মাসিকের সময়কালটি পর্যবেক্ষণ করে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাবিয়ে রাখতে পারেন। এ ছাড়া এখন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্টফোন সেগুলোতেও কিন্তু ক্যালেন্ডার মেথড দিয়ে মাসিকের তারিখটি যত্ন করে লিখে রাখা যায়।
অতিরিক্ত রক্তপাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মাসিকের প্রথম দিনগুলোতে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দিনে পাঁচটির বেশি প্যাড সম্পূর্ণভাবে ভিজে গেলে আমরা তাকে অতিরিক্ত রক্তপাত বলে থাকি। নানা কারণে এটা হতে পারে হতে। হতে পারে শরীরের হরমোন এর নানা প্রভাবে। এ সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। এ ছাড়া মাসিকের প্রথম দিনগুলোতে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা যায়। হালকা গরম প্যাড বা গরম পানির বোতল তলপেটে দিলে কিছুটা ব্যথার উপশম হয়। তবে যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিশোরী বোনেরা, প্রথম মাসিক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক একটি ঘটনা, মাসিক মোটেও লজ্জা বা গোপনীয় কোন বিষয় না। আপনারা যারা মা রয়েছেন, তারা আপনার কিশোরী মেয়ের মাসিকের প্রথম দিনটি সহজ করার জন্য নানাভাবে উদযাপন করতে পারেন। তার পছন্দের খাবার তৈরি করে দিতে পারেন, দিতে পারেন ছোট কোনো উপহার। প্রথম মাসিক জীবনে দ্বিতীয়বার আসবে না। তাই আসুন, আমরা আমাদের রাজকুমারীদের তৈরি করি তার জীবনের এই প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটির জন্য।