টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি বুধবার জামিনে মুক্তি লাভ করেছেন।
২৮ আগস্ট (২০২৪) দুপুরে জামিন লাভের পর তিনি বিকেলে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
আদালত সূত্র জানায়, ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দী সহিদুর রহমানের জামিনের জন্য তার আইনজীবীরা টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন।
তারা জানান, সহিদুর কারাগারে খুব অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তার অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। থাইরয়েডের সমস্যাসহ আরো অনেক রোগে ভুগছেন। সুচিকিৎসা না পেলে তার মৃত্যু হতে পারে। যে কোন শর্তে সহিদুরের জামিন চান আইনজীবীরা।
পরে ওই আদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান শুনানি শেষে তাকে মামলার আগামী ধার্য তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। আগামী ধার্য তারিখে কি কি চিকিৎসা গ্রহণ করলেন তা আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত সরকারি কৌশলী মনিরুল ইসলাম খান।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মোকলেছুর রহমান জানান, সহিদুর রহমান খানের জামিন মঞ্জুরের কাগজপত্র বিকেল তিনটার দিকে কারাগারে আসে।
পরে সাড়ে তিনটার দিকে তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
সহিদুর রহমান খানের বাবা আতাউর রহমান খান ও ভাই আমানুর রহমান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। এ মামলায় সহিদুরের অপর তিন ভাইও আসামী।
সহিদুরের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ঢাকায় চিকিৎসা গ্রহনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন। সেখানে কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করবেন।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তারপর সহিদুর আত্মগোপন করেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠান।
পরে ২০২২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিন পেয়েছিলেন। পরে আদালত জামিত বাতিল করার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার কারাগারে যান। এরপর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২২ নভেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে আদালত তার জামিন বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।
যে কারণে মামলার আসামী তিনি –
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সাথে তৎকালিন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত বলে বের হয়ে আসে।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
এতে সহিদুররা চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
অতিরিক্ত সরকারি কৌশলী মনিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন মামলাটির শুধু তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।