টাঙ্গাইল প্রি ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ শাহানারা বেগম অভিবাবকদের বিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিনের নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের বিতর্কিত অধ্যক্ষ শাহানারা বেগম।
০৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অধ্যক্ষের পদ থেকে শাহানারা বেগম এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ থেকে তার স্বামী হারুন অর রশিদ পদত্যাগ করেন।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে গত রোববার সকালে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে গেলে অধ্যক্ষের স্বামী তথাকথিত সুশীল নামধারী ও টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশীদ তার লোকজন নিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে অধ্যক্ষের স্বামী হারুন অর রশীদ সেখান থেকে চলে যায়। নিজের স্ত্রী অধ্যক্ষ শাহানারা বেগমকে রক্ষার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। এদিকে বিক্ষোভ থেকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিরত থাকতে গত রাতে বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষককে নানাভাবে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে।।
এদিকে রোববার মানববন্ধনের পর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেন জেলা প্রশসক মো. কায়ছারুল ইসলাম। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত চলাকালে অধ্যক্ষ শাহনারা বেগমকে দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে অধ্যক্ষ ও তার স্বামী হারুন অর রশীদ স্কুলে প্রবেশ করে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদেরকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাদের বিরুদ্ধে তখন বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌছলে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।
সেখান থেকে অধ্যক্ষ ও তার স্বামী হারুন অর রশীদকে একটি অটোরিক্ষায় উঠিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে বিতর্কিত অধ্যক্ষ শাহনারা বেগম পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। অভিভাবকরা জানান, এরমধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ বছর ধরে জিম্মি করে রাখা অধ্যক্ষ শাহানারা যুগের অবসান ঘটে। অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের নানা বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ছাত্রীরা স্কুলে হিজাব পড়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরকে গেটে বাঁধা দেয়া হয়। তাছাড়া স্কুলের কতিপয় শিক্ষক প্রতিনিয়ত ছাত্রীদের হিজাব পড়তে নিষেধ করে আসছে। সম্প্রতি হিজাব পড়াকে কেন্দ্র করে এক অভিভাবকের সাথে শিক্ষকদের কথাকাটাকাটি হয়।
এ বিষয়টি জানাজানির পর অভিভাবকদের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে তারা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করতে গেলে অধ্যক্ষের স্বামী হারুন অর রশীদ তার লোকজন নিয়ে বাঁধা দেয়। এ সময় তারা ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এরপর অভিভাবকরা অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে প্রায়ই অধ্যক্ষের কাছে লাঞ্চিত হন তারা।
স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্যে কোন টিফিন টাইম নেই। শিক্ষার্থীরা অনেকটা পালিয়ে পালিয়ে টিফিন করে থাকে। এছাড়া কোচিং বানিজ্য, সকল বই খাতা-কলমসহ শিক্ষা সরঞ্জাম স্কুল থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হয়। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সখ্যতা থাকায় তিনি ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য গড়ে তুলে দাপটের সাথে নানা অনিয়ম করতেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে ভয় পেত। স্কুলের নামে দোকান ভাড়া, ১২০০ শিক্ষার্থীর বেতন পরীক্ষা ফিসহ লাখ-লাখ টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। সেই দুর্নীতির টাকা দিয়ে শহরে বিলাস বহুল বাসা বানিয়েছেন। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে জানাতে গেলে প্রায়ই তার লাঞ্ছিতের শিকার হতে হয়েছে। স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্যে কোনো টিফিন টাইম নেই। শিক্ষার্থীরা অনেকটা পালিয়ে পালিয়ে টিফিন করে থাকে। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য, সকল বই খাতা-কলমসহ শিক্ষা সরঞ্জাম স্কুল থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হয়। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টাঙ্গাইল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন শাহানারা বেগম।