নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ৬ বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদারকে।
দেশের নির্রবাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১ অক্টোবর কাজ শুরু করবেন তিনি। তিন মাসের মধ্যে তাকে কাজ শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তীতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সভার আয়োজন করবে বলে জানা গেছে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক ৩ থেকে ৭ দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।
বদিউল আলম মজুমদারের পাশাপাশি দেশের পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে সরফ রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারের দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব থাকছে ড. শাহদীন মালিকের ওপর।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পোলাইয়া গ্রামে ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। কলেজে দ্বিতীয়বর্ষে পড়াবস্থায় তিনি ছাত্র সংসদের ভিপি (সভাপতি) পদে নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে ড. বদিউল আলম মজুমদার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ড. মজুমদার ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ও পরবর্তীতে (১৯৬৭) জিএস নির্বাচিত হন। তিনি যখন হলের জিএস, তখন ছিল একটা উত্তাল পরিস্থিতি। ছয়দফার আন্দোলন তুঙ্গে। পরে ৬৯’র গণআন্দোলন। সে সময় প্রায় সব আন্দোলনই পরিচালিত হতো ইকবাল হল থেকে। যেহেতু সে সময় উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বঙ্গবন্ধু বহুবার গ্রেফতার হয়েছেন, তার প্রতিবাদে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ছাত্রনেতারা রাজপথে ছিলেন। ৬৯-এ ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে তথা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও ড. বদিউল আলম মজুমদারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন বদিউল আলম মজুমদার। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের এক বছরের মাথায় ১৯৭০ সালে বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ল্যারমন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র ৩১ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বদিউল আলম মজুমদার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি সৌদি রাজপরিবারের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে আসার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অধ্যাপনা করছিলেন।
১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে ড. বদিউল আলম মজুমদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। দেশে ফিরে ড. মজুমদার ‘ইউএসএআইডি’ পরিচালিত ‘পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যানালাইসিস গ্রুপ’ প্রকল্পে চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর হিসেবে প্রায় দুই বছর (১৯৯২-৯৩) কাজ করেন। ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি যুক্ত হন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে।
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ড. বদিউল আলম মজুমদারকে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’র বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য করেন। একই বছর তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গতিশীল ও শক্তিশালীকরণ কমিটির একজন সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বর্তমানে টিআইবির উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য এবং ডেনমার্ক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত ‘হাইসাওয়া ফান্ড কোম্পানি’র বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার একজন স্বনামধন্য কলামলেখক। আমেরিকান ইকোনমিক্স অ্যাসোসিয়েশন, কানাডিয়ান ইকোনোমিক্সসহ বহু প্রফেশনাল অধিবেশনে বিভিন্ন সময়ে তিনি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন এবং তার গবেষণাপত্র বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, রাজনীতি ও সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক লেখালেখি ড. বদিউল আলম মজুমদারের নয়টি গ্রন্থ এবং তার সম্পাদনায় আরও চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।