মোজাম্মেল হক: “মেঘ থম থম করে, কেউ নেই নেই, জল থৈ থৈ তীরে কিছুু নেই, নেই আঁধারের যে নেই পারাপার তুমি আমি সব একাকার” ভুপেন হাজারিকার ঐতিহাসিক গানটির মতো ধোঁয়াশা এখন টাঙ্গাইল জেলার ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা।
ক্রীড়াপ্রেমী সাধারণ মানুষের চাওয়া টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গনে সুদিন আসবে কি? কথায় আছে যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ! তাহলে সুদিনের পথ কে দেখাবে? জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চাহিদা মাফিক বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ্যাডহক কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এখানে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসককে আহবায়ক করে ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে থাকবেন সরাসরি ক্রীড়া সম্পৃক্ত ব্যাক্তি ২জন (খেলোয়াড়/কোচ/রেফারী
প্রমুখ), স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সর্বজন শ্রদ্ধেয়/সর্বজন গ্রহণযোগ্য ক্রীড়ানুরাগী/ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তি ১জন , ক্রীড়া সম্পৃক্ত/সংগঠক ছাত্র
প্রতিনিধি ১জন, ক্রীড়া সাংবাদিক ১ জন ও সদস্য সচিব হিসেবে জেলা ক্রীড়া র্কমকর্তা।
এই এ্যাডহক কমিটিতেই যদি অযোগ্য লোকের স্থান হয়। তাহলে সেই কমিটির কাছে সুষ্ঠ নির্বাচন কতটুকু প্রত্যাশা করা যায়? সেক্ষেত্রে এখানেই যোগ্য
ক্রীড়ামোদী সবারই প্রতাশা। যে কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে দিতে পারবে সত্যিকারের নায্য কমিটি। যে কমিটির সহায়তায় দক্ষ সংগঠক, প্রশিক্ষক ও
প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অপেক্ষার প্রহর কাটবে! সত্যিকারের ক্রীড়াঙ্গনে ভরে যাবে টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম!
জেলা প্রশাসক বলেন, সারা বাংলাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়ার সংস্থার কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের দিক নির্দেশনায়
অতি দ্রæত টাঙ্গাইলে সাবেক ক্রীড়াবিদ, দক্ষ ক্রীড়াপ্রেমী সংগঠক ও প্রশিক্ষক নিয়ে ৭(সাত) সদস্য বিশিষ্ট এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হবে। আমরা দ্রæত টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে খেলাধূলা আয়োজন করে খেলোয়াড়দের মাঠে নামাতে চাই এবং ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকরা মাঠে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।” অন্য জেলার মতো মাঠে অনিয়মিত খেলাধূলা না হলেও টাঙ্গাইলে কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন হতো।
সর্বশেষ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ হয়েছিলো ২০২১ সালে এবং ক্রিকেট লীগ ২০২২-২৩ মৌসুমে। মাঠের ঘাসগুলি একটু বড় হওয়ার আগেই ঘাস ছেঁটে ছেঁটে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন হতো। কিন্তু দর্শক নন্দিত খেলা কই? ফুটবল খেলার আয়োজন হয় মাঠ মাতানো দক্ষ ফুটবলার ছাড়া। যে খেলায় দর্শক হয় না, কিছু দর্শক আসলেও মাঠে বাদাম কিংবা ছোলা দাঁতের ফাঁকে চিবিয়ে খেলা শেষ হওয়ার আগেই অতৃপ্ত মনে মাঠ ত্যাগ।
দর্শকেরা বলে, মাঠে এসেছি এই জাম্বুরা মার্কা খেলা দেখতে? তারকা খেলোয়াড় না হলে খেলা জমবে না! ক্রিকেট খেলায়ও নেই কোন প্রাণ! অথচ বাংলাদেশে এখন ক্রিকেটের জোয়ার। ক্রিকেট খেলায়ও দর্শক হাতে গোনা অল্প সংখ্যক, ক্লাবের কর্মকর্তারাই বড় সমর্থক।
টাঙ্গাইলের মাঠে জাতীয় দলের তারকা ফুটবলারদের দেখা না গেলেও ঢাকার মাঠে,বিদেশের মাঠে টাঙ্গাইলের ফুটবলারদের বিচরণ বাঘের মতো। এক সময় নারায়নগঞ্জের ফুটবলাররা বাংলাদেশ জাতীয় দলে মেলা বসাতো। সেই মেলা এখন টাঙ্গাইলের বিশ^নাথ, সুমন রেজা, রফিকুল, রবিউল, সৌরভরা বসায়।
তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে টাঙ্গাইলের একজন ক্রিকেটারও খেলার সুয়োগ পায়নি, যা টাঙ্গাইলবাসীর আজম্ম দুঃখ ও কষ্ট! অথচ টাঙ্গাইলের ক্রিকেটারদের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিয়োগকৃত জেলা ক্রিকেট কোচ। যার অবদান বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব-১৪, ১৫ ও ১৮ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একছত্র আধিপত্য। যদিও বারং বার পরাজিত ময়মনসিংহজেলা সহ অন্যান্য ক্রিকেট জেলা কোচ ম্যানেজার আড়ালে আবডালে টাঙ্গাইলের ক্রিকেটারদের সাফল্যকে বয়সচুরির অভিযোগে পিষ্ট করেন। তবে টাঙ্গাইল জেলার কোচ আরাফাত রহমানের কাছ থেকে জানা যায়। টাঙ্গাইলসহ সব দলের ক্রিকেটাররা মেডিকেল পরীক্ষায় পাশ করেই খেলার সুযোগ পায় অন্যথায় নয়।
তবে একটানা ১৬ বছর যাবত জেলা ক্রিকেট কোচ আরাফাত রহমানের শিষ্যরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার পর হারিয়ে যায়। তারা পরবর্তীতে ভালো পারফরমেন্স না দেখাতে পারায় জেলা পর্যায়ে টাঙ্গাইল জেলা কোন কালেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তারা পারেনি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ভালো দলগুলোতে অংশগ্রহন করতে। এর মধ্যে রিজান হোসেন, দেবাশীষ সরকার, ইমতিয়াজ, প্রীতম,পাপ্পু, কামরুল, মুন, জহির, তারেক, বিকেএসপির রিফাত বেগ ও রিফাত আল জাবির একটু ব্যতিক্রম। রিজান হোসেন প্রাইম দলেশ^র, দেবাশীষ সরকার গাজী গ্রæপের প্রথম বিভাগে। রিজান ও দেবাশীষ দু’জনই বর্তমানে বাংলাদেশ যুব দলের ক্যাম্পে আছে।
এছাড়া ইমতিয়াজ ঢাকা লিওপার্ট এবং প্রীতম খেলেন বারিধারায়। এছাড়া টাঙ্গাইলের বিপিএল রতœ মেহেদী মারুফ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে গাজী
গ্রæপের অধিনায়ক এবং নাজমুল হোসেন মিলন ঢাকা মোহামেডানে খেলেও সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। টাঙ্গাইলের ছেলে মৃত কুন্তল চন্দ্র পাপন, আবু নাসের মানিক, জয়রাজ শেখ ইমন বাংলাদেশের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপে অংশগ্রহন করেছেন।
এছাড়া সাজ্জাদ কাদির, বাঁহাতি স্পিনার রাসেল খান, জয়দেব বসাক, ইসলাম খান, সুমন সরকার, রিপন সরকার, তাপস বসাক, সৈকত, কৌশিক চন্দ্র টোকন, নির্মল দও, মদন, উত্তম, সুশান্ত, অভিজিৎ দত্ত, রবিন সরকার, মুরাদ, ভূপেন্দ্রনাথ বাবু, মানিক ও সুখন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সুনামের সাথে খেলেছেন। তবে জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার মতো খেলেছেন বিমানের উইকেট কিপার সাজ্জাদ কাদির, ওয়ারীর রাসেল খান ও আবাহনীর মৃত কুন্তুল চন্দ্র পাপন বিভিন্ন পর্যায়ে ডাক পেয়েও চুড়ান্ত দলে খেলতে পারেননি।
সাবেক ক্রিকেটার রাসেল খান বলেন, নব্বই দশকে ঢাকা থেকে আগত কোচ আলতাফ স্যারের মাসব্যাপী ক্রিকেট কোচিংয়ে খেলাধূলার অল্পসল্প সামগ্রীর সুযোগ নিয়ে আমরা ঢাকায় প্রথম বিভাগে খেলেছি। অথচ বর্তমানে অনেক বেশী সুযোগ সুবিধা নিয়েও টাঙ্গাইলের ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাতে পারছে না।
এখানে বর্তমান কোচ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পায়।” টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামে ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়াও এ্যাথলেটিক্সস, ভলিবল,
ব্যাডমিন্টন ও কাবাডি খেলা বিচ্ছিন্ন ভাবে আয়োজন হয়ে থাকে। এখানে ভলিবল খেলায় কিছুটা সাফল্য আছে। সর্বশেষ ২০২৩সালে বিভাগীয় যুব ভলিবলে টাঙ্গাইল জেলা গাজীপুরের কাছে পরাজিত হয়ে রানার্সআপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি এবং দক্ষ ভলিবল কোচের অভাবে ভলিবলে সুনাম অর্জনকারী টাঙ্গাইলের পারফরমেন্স শেষ হওয়ার পথে। নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির সুযোগ হলেই সম্ভব ভলিবলে হারানো গৌরব ফিওে পাওয়া। বর্তমান যুগে এই পর্যায়ে স্কুল ও কলেজ ছেলেমেয়েদের আগ্রহ কিছুটা কম।
এখানে তাদের আগ্রহকে অন্য জগতে নিয়ে গেছে “মোবাইল” নামক যন্ত্রটি। শিশু কিংবা কিশোর বয়স থেকে ছেলেমেয়েরা মোবাইলে আসক্তি হয়ে যাচ্ছে। পাবজি গেম কিংবা অন্যান্য গেমে তারা হারিয়ে যাচ্ছে। গেমসে আসক্তি বাড়াচ্ছে অপরাপ প্রবণতা। বিকেলে যেখানে ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠে থাকার কথা, সেখানে তারা মজে আছে বাসার পাশে কিংবা মাঠের এককোনায় মোবাইল হাতে নিয়ে। এসব ছেলেমেয়েরা মোবাইলে গেম, ফেসুবক ও টিকটিকার করে ভবিষ্যত অন্ধকারে করে হারিয়ে যাচ্ছে।
স্টেডিয়ামের খেলাধুলা আয়োজন ও পরিচালনা করতে লাগে দক্ষ সংগঠক,দক্ষ পরিচালক। কিন্তু সাবেক খেলোয়াড়, ক্রীড়ামোদী দর্শকদের অভিযোগ উঠে আসছে না নতুন সংগঠক ও পরিচালক। তাদের উঠে আসার সুযোগ মাঠে দিচ্ছে না মাঠে পড়ে থাকা সংগঠক ও পরিচালকরা। নতুন সংগঠক ও নতুন পরিচালক উঠে আসলে তারা বেকার হয়ে যাবে হয়ত, এই ভয় কাজ করে। উদাহরন দেওয়া যায় দুই যুগ আগে আম্পায়ার, স্কোরার ও প্রশিক্ষক কোর্সের আয়োজন হয়েছিলো। তারপরে এই যুগ আর ফিরে আসেনি। অথচ খেলাধূলায় অবসর নেওয়া সাবেক খেলোয়াড়বৃন্দ অপেক্ষায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই আয়োজনে। এছাড়া অভিযোগ আছে জেলা আম্পায়ার ও স্কোরিং এসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৫ বছর পার হয়ে গেলেও একই কমিটি
দিয়ে খেলা চালানো হয়।
জেলা পর্যায়ের বাইরে উপজেলা পর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা আরো স্থবির। গোপালপুর, ভূঞাপুর, মধুপুর উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনের খবর কিছুটা ভালো হলেও সেটা নামমাত্র। জানা গেছে কোন কোন উপজেলায় ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয় নাই। নির্বাচন দূরের কথা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ রেখে নামমাত্র পদবী ধরে রাখা। উপজেলায় খেলাধূলা উন্নয়ন কিভাবে করা যায় সেই বিষয়ে কোন তাগিদ নাই। আর এগুলো দেখারও কেউ নাই। সাবেক ক্রিকেটার বাংলাদেশ বিমানের সাবেক উইকেট রক্ষক ও ব্যাটসম্যান সাজ্জাদ কাদির বলেন, জেলা ক্রীড়ার কার্যক্রমে সাবেক ক্রিকেটারদের মূল্যায়ন হয়না। সাবেক ক্রিকেটারদের মূল্যায়ন হলেই তারাই দক্ষ সংগঠক, পরিচালক হয়ে উঠবে। তাদের হাতে দায়িত্ব এলেই স্বজনপ্রীতিসহ অনেক অনিয়ম দূর হবে। প্রতিভা সম্পন্ন খেলোয়াড় উঠবে আসবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। এদের ঠিকমত পরিচর্চা করলেই জাতীয় দলের পথ এরাই উম্মোচন করবে”।
শ্রীলংকায় অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপে অংশগ্রহনকারী আবু নাছের মানিক বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে দরকার দক্ষ সংগঠক, যারা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারে। দরকার দক্ষ প্রশিক্ষক, এক্ষেত্রে সাবেক খেলোয়াড়রা পারে এই সমস্যা দূর করতে”। জানা গেছে, মাঠে অনিয়মিত ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা আয়োজনের পিছনে মাঠ সংকট প্রধান সমস্যা। খেলার জন্য মাঠ টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়াম একটি। ছয় মাস ফুটবল আর ছয় মাস ক্রিকেট। এভাবেই চলতো। যদিও বছর খানেক হলো বাসাখানপুরে ফুটবল কিংবা অন্যান্য খেলাধুলার জন্য মাঠ তৈরীর কাজ শেষের পথে। তারপরও কথা থাকে, মাঠ খেলার জন্য পেলেই ফুটবল ক্রিকেট প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগসহ সব বিভাগের খেলা হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। বিভিন্ন অজুহাতে
দিনের পর দিন খেলা পিছিয়ে যায়। অথচ জেলায় জেলায় ফুটবল ও ক্রিকেট লীগ আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অনুদান আসে। সেই অনুদানের কোন খবর নেই! এভাবেই বছরের পর বছর খেলোয়াড়দের হতাশ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা গুলো অনিয়মিত ভাবে লীগ গুলো আয়োজন করে থাকে। যদিও লীগ বললে ভুল হবে, টুর্নামেন্ট আয়োজন করে থাকে। কারণ লীগের নিয়মতো
অংশগ্রহনকারী প্রত্যেকটি দলের সাথে প্রত্যেকটি দলের প্রতিদ্বন্দিতা। এখানে অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে ৪টি কিংবা ৩টি গ্রæপে ভাগ রবীন লীগ পদ্ধতিতে ফুটবল ও ক্রিকেট লীগ আয়োজন করে থাকে। এ সর্ম্পকে জানা যায়- জেলা পর্যায়ে এভাবে লীগ আয়োজন সম্ভব নয়, কারণ এখানে আর্থিক দিকটা জড়িত। একটা ক্লাব অংশগ্রহনকারী ফি পায় নামে মাত্র। অথচ ক্লাবের খরচ অনেক বেশী। খেলোয়াড়দের মজুরি, জার্সি ছাড়াও রয়েছে প্র্যাকটিস ও খাওয়া খরচ। এই খরচগুলি এলাকার ক্লাবগুলি বিভিন্ন সমাজসেবক কিংবা রাজনৈতিক নেতার নিকট থেকে নিয়ে চালায়। আবার কোন কোন ক্লাবের কর্মকর্তারাও ক্লাবের খরচ থেকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকে। যে কারনে জেলার খেলোয়াড়বৃন্দ সারা বছর খেলাধূলার পিছনে সময় ব্যয় করে খেলার ম্যাচ পায় ৩টি থেকে ৪টি। দল যদি ফাইনাল পর্যন্ত পৌছায তাহলে তার ম্যাচ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সারা বছর প্র্যাকটিস করে ৫ থেকে ১০টি ম্যাচ খেলে একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় তার প্রতিভা বিচ্ছুরিত করতে পারে না।
টাঙ্গাইলের খেলাধূলাকে গ্রাসরুটস লেবেল থেকে স্পোর্টস ট্যালেন্টস ছেলেমেয়েদের আধুনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে স্বচ্ছল, নিলোর্ভ, দক্ষ প্রশিক্ষক ও দক্ষ সংগঠক থাকতে হবে। সত্যিকারের ক্রীড়া অনুরাগীদের কাজের সুযোগ দিতে হবে। তবেই টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন হবে।
সাবেক তারকা ফুটবলার গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, বৈষম্যহীন এবং সমতাভিত্তিক ক্রীড়াঙ্গন প্রথম থেকেই কাম্য ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুখান রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংস্কার সাধনের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গনে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন বলেন, বাস্তবতা হলো, কয়েক বছর ধরে টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গন ক্রমাগত গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ক্রীড়াঙ্গনের দলীয় রাজনীতির প্রভাব বেড়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন অনুপস্থিত। নীতিবিবর্জিতভাবে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে ব্যক্তি ও সমষ্টির ইচ্ছা এবং মর্জিমাফিক। জাতীয় স্বার্থ, চেতনা ও মূল্যবোধ টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গনে নেই। স্বেচ্ছাচারিতা, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা,জনতুষ্টিবাদ, বিভাজন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা- ক্রীড়াঙ্গনের নীতি আদর্শ ও লক্ষ্যকে সরাসরি নষ্ট করছে। সব সংগঠককে এই পরিবেশ সৃষ্টির দায়ভার বহন করতে হবে। ক্রীড়া সংগঠকদের বুঝতে হবে তাঁদের কার্যকলাপের জন্যই তাঁরা আত্বপরিচয় হারাতে বসেছেন।
সর্বশেষ প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন ইয়ং স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি এসএসএস এনজিও প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সিনিয়র পরিচালক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া শিপন বলেন, যে ক্রীড়াঙ্গনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা নেই, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতা অভাব, ক্রীড়াঙ্গনকে ভবিষ্যতের রাজপথে তুলতে তো বেগ পেতে হবে। এখনই সময় ক্রীড়াঙ্গন মেরামত করার। ক্রীড়াঙ্গনে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করার। সাবেক খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করে সংগঠক, প্রশিক্ষক ও খেলা পরিচালনায় তাদের দায়িত্ব
দিয়ে মাঠে নামাতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। মূল কথা হলো খেলোয়াড়দের স্বার্থ রক্ষা করলেই খেলোয়াড়ই পারবে ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে।
বাংলাদেশ জাতীয় দল এবং ঢাকা মোহামেডানের দ্রæত গতির উইংগার শহিদুল আহমেদ রঞ্জন বলেন, ক্রীড়াঙ্গন ব্যক্তির বিপক্ষে লড়াই নয়, দরকার সামগ্রিক কাঠামোতে পরিবর্তন। জঞ্জাল দূর করতে হলে ক্রীড়াঙ্গনে সব ফেডারেশন পরিবর্তন আনতে হবে। ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর বর্তমান সংবিধান রেখে জবাবদিহিমূলক কাঠামো তৈরি সম্ভব নয়। সম্ভব নয় ক্রীড়াঙ্গনে সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক চর্চা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু আহমেদ শেরশাহ ও মোঃ নবাব আলী বলেন, টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়নের স্বার্থে সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ ক্রীড়াপ্রেমী সংগঠক ও দক্ষ প্রশিক্ষণের দরকার। এগুলোর সাথে খেলাধূলার সরঞ্জাম যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে উন্নয়ন অবশ্যই সম্ভব।
টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মোঃ আফাজ উদ্দিন বলেন, যে ক্রীড়াবিদ, সংগঠক ও প্রশিক্ষক দক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান এবং সক্রিয় তাদেরই জেলা ক্রীড়া সংস্থায় থাকা উচিত। মাঠে সব খেলাধূলার সমান অধিকার দরকার।” পরিশেষে একথা বলা যায় যে টাঙ্গাইলের ক্রীড়াঙ্গন নতুন করে গড়ে তোলার এখন সময়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রীড়াঙ্গনে শুরু হয়েছে অস্থিরতা, যেটি সুস্থ ক্রীড়াচর্চার জন্য উদ্বেগের বিষয়! ক্রীড়াঙ্গনে লক্ষণীয় হচ্ছে দীর্ঘদীনের জমে থাকা
ক্ষোভ, অভিমান ও হতাশার প্রতিফলন। ্ধসঢ়; এ থেকে মুক্তি পেতে হবে। নতুন পৃথিবীর ন্যায় দলমত নির্বিশেষে একটি সুন্দর ক্রীড়া কমিটিই সকলের প্রত্যাশা।