টাঙ্গাইল জেলা শহরের সাবালিয়া এলাকায় বনফুল টাওয়ারে এক বিধবা পরিবারের ফ্ল্যাট দখলের চেষ্টা’সহ বিভিন্ন অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
পরিবারটি নিরাপত্তা চেয়ে ও সমস্যার সমাধানে টাঙ্গাইল সদর থানা’সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করেছে। ভুক্তভোগী ওই পরিবার দশতলা বিশিষ্ট ওই টাওয়ারের অন্যান্য ফ্ল্যাট মালিক ও স্থানীয়দের নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইল বনফুল টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন করে। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল করে।
অভিযোগপত্রে ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা জানায়, ওই টাওয়ারের এক ফ্ল্যাট মালিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী অপর ফ্ল্যাট মালিকদের উপর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে হয়রানী ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। উজ্জল পুলিশের চাকুরী করতো। প্রায় ১০ বছর আগে বনফুল টাওয়ারে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। তারা আর অভিযোগ করেন, ফ্ল্যাট চালু হওয়ার পর তার ফ্ল্যাটে মাদক সেবন, বিক্রি ও নারী কেলেংকারীসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড চলে আসছে। এক সময়ে পুলিশের চাকুরীর সুবাদে থানায় বিভিন্ন সময়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর এ সুযোগে উজ্জল তার ফ্ল্যাটে এসব অনৈতিক কর্মকান্ড করে আসছে। এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকদের নানাভাবে হয়রানী করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্ল্যাটের মালিক মৃত রহমত উল্লাহের দ্বিতীয় স্ত্রী দিলাওয়াতীর পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানী করে আসছে।
ফ্ল্যাটের মালিক মৃত রহমত উল্লাহের দ্বিতীয় স্ত্রী দিলাওয়াতী লিখিত অভিযোগ করে বলেন, মুখলেসুর রহমান ও আব্দুল আউয়ালের সহযোগিতায় উজ্জ্বল চক্রবর্তী বনফুল টাওয়ারের বাসায় বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে এসে অসামাজিক কার্যকলাপ করে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী বলেন, ফ্ল্যাটের শেয়ারগণ এবং এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে উজ্জ্বল চক্রবর্তী, মুখলেসুর রহমান ও আব্দুল আউয়াল তাদেরকে চাঁদাবাজি, মাদক মামলায় জেল হাজতে পাঠানো’সহ নানা ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে থাকেন।
তারা আরো বলেন, ইতিপূর্বে তারা স্থানীয় উঠতি বয়সী ছেলেদের ইয়াবা’সহ অন্যান্য মাদকদিয়া ধরাইয়া দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে। মান সম্মানের ভয়ে ও মামলাসহ হয়রানীর ভয়ে কোন অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ করায় তারা বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি ও হুমকি ধামকী প্রদান করে। উজ্জ্বল চক্রবর্তী কিছুদিন পূর্বে অপরাধের কারনে পুলিশের নিকট গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিল।
অভিযোগকারী দিলাওয়াতী বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের বেলায় বনফুল টাওয়ারের সামনে তাদের এই ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে বাঁধা দেয়ায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। আমাকে বলে তোমাকে কিছু টাকা দিয়ে দেই, কাগজে সাইন করে তোমার দেশে চলে যাও। এ অবস্থায় তাদের ভয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী’সহ আমরা ফ্ল্যাটের মালিকগণ চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় তারা আমাদের আরো বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
এ ব্যপারে ফ্ল্যাটের আরেক মালিক আকবর হোসেন মিঠু অভিযোগ করেন, বনফুল টাওয়ারে আমার দুইটি ফ্ল্যাট আছে। একটা ফ্ল্যাট আমি দশ বছর আগে কিনেছি। আরেকটা দুই বছর আগে কিনেছি। উজ্জ্বলের ভয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারি না। সে প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদক সেবন, মাদক বিক্রি ও নারি কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। সে ফ্ল্যাটগুলোর সকল সার্ভিসচার্জ নিলেও তা কোথায় কিভাবে খরচ করছে সে হিসাব কখনো দেয়নি। টাকার হিসেব চাইলে উজ্জল ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে থাকে। সে দীর্ঘদিন ধরে টাওয়ার মালিক কল্যান কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। কোন কমিটি আজও পর্যন্ত নতুন করে নির্বাচন বা অন্য কোনভাবে পরিবর্তন করতে দেয়নি। এক কথায় গায়ের জোরে সে এই পদ দখলে রেখেছে। নানা সময়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় আমরা আইনী কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস পাইনি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য বসার প্রস্তাব দেয়া হয়। এরপর তিনি অভিযোগ করেন আমরা নাকি তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করার হুমকিও দেন তিনি। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় আমাদের আরো বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বনফুল টাওয়ারের সাধারন সম্পাদক উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, আমার নামে যে সব আভিযোগ আনা হয়েছে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি সব সময় বনফুল টাওয়ারের উন্নয়নের জন্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে। আমি আমার দ্বায়িত্ব থেকে সরে যাবো। আমি কয়েক দিনের মধ্যে সব হিসাব শেষ করে আমার দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিব।
এ বিষয়ে সদর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি, বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষ আমার সাথে কথা বলেছে। উভয় পক্ষ এই বিষয় নিয়ে বসবে। তারা যদি কোন সমাধানে না যায়, তবে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিব।