টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তারেকুল ইসলাম ঝলকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে গাড়ি ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত ১৯ নভেম্বর টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন জুথী খাতুন নামে এক নারী।
এতে টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তারেকুল ইসলাম ঝলক’সহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অপর দুই আসামি হলেন- মামলার বাদীর শ্বশুর ফটিকুজ্জামান ও আতিকুর রহমান সিদ্দিকী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী জুথী খাতুনের শ্বশুর ফটিকুজ্জামান ও তার স্বামী মৃত ফিরোজ সরকারের যৌথ মালিকানায় একটি পুরাতন অমিনিবাস (লার্জ) টাটা গাড়ি, যার রেজি. নং- ঢাকা- মেট্রো-ব- ১৪-৭৭৮৮। গাড়িটি উভয়ে পরিচালনা করে আসাবস্থায় জুথী খাতুনের স্বামী ফিরোজ সরকার মৃত্যুবরণ করা স্বত্বেও তার নাম স্বাক্ষর জাল করে গত (৭ নভেম্বর) ৬০৩৯ গাড়িটি বিক্রয়ের জাল এফিডেভিট তৈরি করে। ওই এফিডেভিটের ক্রেতা তারেকুল ইসলাম ঝলক গাড়ি ক্রয় করার পর জাল এফিডেভিটের বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলী আদালতে সি,আর-২৬১১/২৪ নং একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়- মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাল এফিডেভিট মূলে উল্লেখিত অমিনিবাস গাড়ির বর্তমান অবৈধ ক্রয় মালিক টাঙ্গাইল জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতিতে যাতে মালিক সদস্য হতে না পারে বা পূর্বে মালিক সদস্য হয়ে থাকলে তার স্থগিত রাখার বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য অবহিত করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, জুথীর খাতুনের স্বামী ও শশুর ফটিকুজ্জামান বিগত ২০২১ সালের (২০ জুন) ১৯৪১ এফিডেভিট মূলে গাড়ির মালিক জেলার বাসাইল উপজেলার মটরা গ্রামের দীন ইসলামের কাছ থেকে একটি পুরাতন অমিনিবাস (লার্জ) টাটা গাড়ি ক্রয় করেন। গাড়ি পরিচালনা করা অবস্থায় জুথী খাতুনের স্বামী ২০২১ সালের ১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে এই মামলার বাদী ও ১নং বিবাদী উক্ত গাড়িটির স্বত্ব ও দখল পরিচালনা করে আসছেন। এই অবস্থায় বিবাদীরা বাদীর স্বামী স্বত্ব ও দখলীয় অমিনিবাস (লার্জ) টাটা গাড়িটি বে-আইনীভাবে ও বেদখল করার নানান চেষ্টা ও কুট কৌশল অবলম্বন করে। এ অবস্থায় ১নং বিবাদী অন্যান্য বিবাদীর সহযোগিতায় বাদীর স্বামী মৃত্যুবরণ করা স্বত্বেও বাদীর স্বামীর নাম, স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে বাদীর স্বামীর গাড়িটি ৩নং বিবাদী আতিকুর রহমান সিদ্দিকী নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে ঘটনার তারিখ, সময় ও স্থানে বাদীর স্বামীর পরবর্তীতে অন্য লোক দাঁড় করায়। সেখানে বাদীর গাড়ির ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানার টাকা প্রতারণা মূলে আত্মসাৎ করার জন্য নোটারী পাবলিকের সিরিযাল নম্বর-৬০৩৯ গত (৭ নভেম্বর) হলফনামা (এফিডেভিট) জালভাবে তৈরি করেছে।
পরবর্তীতে গত (১৬ নভেম্বর) গাড়ির ভাড়া বাবদ টাকা আনতে গেলে ২নং বিবাদী টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তারেকুল ইসলাম ঝলক বলেন, আমি এই গাড়ি আপনার স্বামী ও শ্বশুরের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়েছি বলে এফিডেভিটের একটি ফটোকপি এই মামলার বাদী জুথী খাতুনকে দেয়।
এ ব্যাপারে বাদী জুথী খাতুন বলেন, আমার স্বামী তিন বছর আগে মারা গিয়েছে। কিভাবে তারা স্বাক্ষর নিয়ে এমন কাজ করলো। আমার প্রাপ্য আমাকে না বুঝিয়ে দিয়ে কিভাবে তারা জালিয়াতি করে। আমি ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে মামলা করেছি।
টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তারেকুল ইসলাম ঝলক বলেন, আমি বৈধভাবে গাড়ি ক্রয় করেছি। ওরা ভুয়া মামলা করেছে, ওরাই ফেঁসে যাবে। কারণ আমি তার শ্বশুরের কাছ থেকে গাড়ি কিনেছি। আমার সব কিছু বৈধ। আমার এফিডেভিটের কাগজ রয়েছে। আমার কাগজ অরজিনাল। তার কোনো কথা থাকলে সে তার শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলবে। তার যদি কোনো দেনা পাওনা থাকে তাহলে তার শ্বশুরের সঙ্গে আছে, আমার সঙ্গে তো কিছু না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খো. ইকবাল হোসেন বলেন, মামলার বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছি। যেহেতু মামলা চলমান রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মালিক সমিতি তা বাস্তবায়ন করবে।