টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখের ঐতিহাসিক পীর শাহজামান দিঘির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। দীঘির ইতিহাস যেমন গৌরবোজ্জল, তেমনি তার বর্তমান চিত্র উদ্বেগজনক। এ প্রেক্ষাপটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সংস্কার দাবীতে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও স্বারকলিপি পেশ করেছেন।
রোববার (২৫ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে ২য় গেট ও ১ম গেট হয়ে প্রত্যয় একাত্তরের সামনে এসে শেষ হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর একটি স্বারক লিপি প্রদান করেন। এরপর সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি ‘র নির্বাহী প্রকৌশলীর হাতে স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান করা হয়। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফোরকান হোসেন বলেন, “আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা রাখছি, মাননীয় ভিসি স্যার’সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদের দীঘিটি সংস্কারে বিশেষ ভুমিকা পালন করবেন।
আমরা চাই দীঘিটির দক্ষিণ পাশের অবৈধ দোকানগুলো সরিয়ে এর চারপাশ বাধাই করে হাটার ব্যবস্থা করা এবং গাছপালা দিয়ে পরিবেষ্টিত করে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। সিপিএস বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান সাজু বলেন, “পীর শাহজামান দিঘি প্রায় ৩৫০ বছরের ঐতিহ্য ও স্মৃতি বহন করে। এলাকার কিছু দখলদার সেই দিঘির পাশে অবৈধ দোকানপাট স্থাপন করেছে যা দিঘির সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। দোকান গুলোর বর্জ্য সরাসরি দিঘিতে ফেলে দিঘির পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা চাই এই অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দিঘির সংস্কার করা হোক। গণিত শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “আজকের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী পীর শাহজামান দীঘীর সৌন্দর্যবর্ধন এবং দীঘির পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট অপসারণের জোড় দাবি জানাচ্ছি।
এই দীঘিটি শুধু একটি জলাধার নয়, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, দীঘির আশেপাশে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা, যা পরিবেশ দূষণ এবং নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ঐতিহ্যবাহী এ দীঘির সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অন্যায় অবস্থা মেনে নিতে পারি না।” স্বারক লিপি থেকে জানা গেছে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত পীর শাহজামান দীঘিটি ১৬৬৮ সনে পীর শাহজামান (রহঃ) খনন করান।
পরবর্তীতে সন্তোষ জমিদার তা দখল করে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী খোশনদপুর ওয়াকফের প্রমাণ নিয়ে কোর্টে হাজির হলে ব্রিটিশ বিচাররক মামলার রায় মওলানা ভাসানী আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পক্ষে দেন এবং তা দখল মুক্ত হয়। সময়ের কালক্রমে দীঘিটি বর্তমানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণ, ভোগ দখল ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটি আয়তনের প্রায় ৩.৫৫ একর, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাকে অনেক বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্নে দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রাস্তা সংলগ্ন স্থানে অল্প সংখ্যক অস্থায়ী দোকান ছিলো। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আইন অমান্য করে দীঘির দক্ষিণ পাশে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটক প্রায় ৩০০ফিট পর্যন্ত সম্পূর্ন স্থানে বিশৃঙ্খলভাবে দীঘির সীমানার মধ্যেই খুঁটি ও বাঁশ পুঁতে অনেক দোকান নির্মান করা হয়েছে। ময়লা- আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে দীঘিতে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য তথা জলাশয় দূষণের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। সেই সাথে হুমকির মুখে পরে আছে ঐতিহাসিক নিদর্শন যা প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষী।
ইতিপূর্বে একাধিকবার প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কার্যত কোন অগ্রগতি দূশ্যমান হয়নি। স্বারক লিপির মাধ্যমে যে দাবী পেশ করা হয়েছে তা হলোঃ- ১. দীঘির চারিপাশ বাঁধাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের হাঁটার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২. প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ। ৩. সুপরিকল্পিতভাবে ভাবে দীঘির চারপাশে বৃক্ষরোপণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৪. নির্দিষ্ট দূরত্বে একাধিক স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা। ৫. দীঘির এক পাশে ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শনটির একটি স্থায়ী প্রচারপত্র স্থাপন করা। স্বারক লিপির জমা দানের পর এ বিষয়ে মাভাবিপ্রবির চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আমরা আমাদের স্থাপনাগুলো কিভাবে সুন্দর করা যায় সে বিষয়গুলো দেখছি। শিক্ষার্থীর এই দাবীগুলোও আমরা দেখবো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।