প্রায় ২৫ বছর পর আদালতের নির্দেশে টাঙ্গাইলের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) এর উপস্থিত হওয়া গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালে টাঙ্গাইল জেলা শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ৩ শতাধিক গ্রাহকের মধ্যে সঞ্চয় বইয়ের জমানো টাকা ফেরত দেয়া হয়।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মাকড়সার জালের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পরে দুর্দান্ত প্রতাপশালী সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস)। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছিল এসডিএস। তাদের প্রলোভনের কঠিন চক্করে পরে গ্রাম ও শহরের মানুষ। গ্রাকদের কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলেও ২০০০ সাল থেকে এসডিএসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে বিপাকে পড়ে গ্রাহকরা। গ্রাহকদের টাকা ফেরতের জন্য মানববন্ধন’সহ বিভিন্ন আন্দোলন করা হয়। এছাড়াও গ্রাহকরা পাওনা টাকার জন্য টাঙ্গাইল জজ কোর্টের তৃতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার আদালত গ্রাকদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়।
প্রায় দুই যুগ পরে টাকা পেয়ে খুশি হয় উপস্থিত হওয়া গ্রাহকরা। ২৫ বছর আগে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সিং এর চাকরি করতেন মনোয়ারা বেগম। সে সময় বেসরকারি সংস্থা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদে (এসডিএস) ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। তারপর এসডিএসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তিনি এই টাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। দুই যুগেরও বেশি সময় পর টাকা পেয়ে খুশি তিনি।
মনোয়ারা বেগম বলেন, এই কষ্টের টাকা ফেরত পাবো তা কল্পনাও করিনি। দীর্ঘদিন পর টাকা গুলো পেয়ে খুব ভাল লাগছে। শুধু মনোয়ারা বেগম নয়, তার মতো তিন শতাধিক গ্রাহককে প্রায় কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল শিশু একাডেমিতে নাজমুল এগ্রো ফিসারিজ অ্যান্ড ডেইরী ফার্মের উদ্যোগে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ঈদের আগেও অর্ধশতাধিক গ্রাহকের মাঝে ৩০ লক্ষাধিক টাকা ফেরত দেয়া হয়।
টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ) ইয়াসির আরাফাত, সরকারি কৌশলী (পিপি) শফিকুল ইসলাম রিপন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানবীর আহম্মেদ, এসডিএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা ‘সহ সংশ্লিষ্টরা।
টাকা ফেরত পাওয়া মো. ওবায়দুল্ল্যাহ বলেন, ৫০ হাজার টাকা খুব কষ্ট করে জমিয়েছিলাম। টাকা গুলো ফেরত পেয়ে খুবই উপকার হলো। টাকা দিয়ে মেয়ের পড়াশোনার কাজে ব্যয় করতে পারবো। এসডিএস গ্রাহক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম চাকলাদার বলেন, গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে আমরা দীর্ঘদিন আইনী লড়াই করেছি। যাদের ডকুমেন্ট আছে, তাদেরই টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে।
এসডিএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নাজমুল এগ্রো ফিশারিজ এন্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হুদা বলেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। যাদের কাছে ডকুমেন্ট আছে, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাদেরই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ফেরত দেয়া হবে।