টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে বিবেকানন্দ স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন: এর পূর্বে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে।
টাঙ্গাইল শহরের বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পদ-পদবি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি-স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওইসব অভিযোগের প্রতিকারে অধ্যক্ষের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বজলুর রহমান বলেন, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের ও তার স্ত্রী রওশন আরা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের হাত ধরে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।
তারপর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করেন। এছাড়া অভিযোগ ওঠেছে গত (৪ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনাও করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে চলতি বছরের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বোনাস ও টিএফ সহ মোট এক কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৯ টাকা উত্তোলন দেখিয়ে ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ২২২ টাকা খরচ করেন। বাকি এক কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৭ টাকা অসামঞ্জস্য ব্যয় দেখান। তিনি পলাতক হওয়ার আগে বেতন ভাতার নামে ৮ লাখ টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। সংবাদ সম্মেলনে এ রকম ১৭টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনের আগে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সংবাদ সন্মেলনে আরোও উপস্থিত ছিলেন, বিবেকআনন্দ হাই স্কুল এ্যন্ড কলেজের প্রভাষক মো. মাজহারুল ইসলাম, অসীমা দাস, মো. শফিকুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ সরকার, রুনা লায়লা, আলী হায়াত, বিবেকআনন্দ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মির্জা গালিব, বর্তমান ছাত্র মো. রাহিম ও মো. রাফি প্রমূখ।
টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে লিখিত বক্তব্যে বিষয়টি জানিয়েছেন বিবেকআনন্দ স্কুল এ্যন্ড কলেজের প্রভাষক মো. আবু দাউদ। সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দের বিরুদ্ধে স্কুল এন্ড কলেজের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলে ধরা হয়। রাজনৈতিক পদ পদবি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দুর্নীতি, স্বজন-প্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্ব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থ তছরুপ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, গত ০৭ আগস্ট পুবালী, ব্যাংক আকুর টাকুর পাড়া শাখা হতে, কলেজ শাখার সঞ্চয়ী হিসাব (হিসাব নং- ৮৮৫৫১) হতে শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বেতন ভাতার নামে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন এবং তা নিজে আত্মসাৎ করে অদ্যবধি পলাতক রয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৪ হতে আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত বিবেকানন্দ হাইস্কুল এভ কলেজের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো থেকে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে উত্তোলন করেছেন সর্বমোট ১ কোটি ৮২ লাখ ৮০হাজার ৩৫৯ টাকা। অথচ শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, বোনাস ও পিএফ সহ মোট খরচ হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৬হাজার ২২২ টাকা। অবশিষ্ট ১ কোটি ৩৯লাখ ৩৪ হাজার ১৩৭ টাকা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাবদ বিজ্ঞান বিভাগ হতে প্রত্যেক শিক্ষার্থরি নিকট হতে ভর্তি ফি বাবদ আদায় করেন ৪ হাজার ৪শত টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা হতে আদায় করেন ৪ হাজার ২শত টাকা। কিন্তু তিনি শিক্ষক-
শিক্ষিকাদের জিম্মি করে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ৩ হাজার পাঁচশত ৫০ টাকা জমা দিতে বাধ্য করেন। বাকী ৬৫০ টাকা করে ৫৪৫জন শিক্ষার্থীদের ৩লাখ ৫৪হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাৎ করেন।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অফ লাইন (ম্যানুয়াল) ভর্তি বাবদ উত্তোলনকৃত ২লাখ ৯৯হাজার ৫০০ টাকা কলেজের ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন । ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থীর নিকট হতে অফলাইনে (ম্যানুয়াল) ভর্তি বাবদ বিনা রশীদে ৫ হাজার ৫শত টাকা করে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর নিকট হতে ম্যানুয়াল ভর্তি বাবদ ২লাখ ৭৫হাজার টাকা দায়িতৃপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে জমা নেন। কিন্তু সমস্ত টাকাই অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে বুঝে নিয়ে কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে নিজেই ভোগ করেন। এ বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ অবগত আছেন।
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে উত্তোলন করেন ২ কোটি ০৯লাখ ৯০হাজার টাকা ঐ বছর শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, পি.এফ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ০৪লাখ ১৬হাজার ৫২০ টাকা বাকী ১ কোটি ০৫লাখ ৭৩হাজার ৪৮০ টাকা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন।
২০২৪ বছর এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীদের নিকট প্রবেশ পত্র বিতরণের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট হতে বিনা রশিদে ৫০০ টাকা করে ৩৪৪ জন শিক্ষার্থীদেও কাছ থেকে ১লাখ ৭২হাজার টাকা উপঢৌকন নেন যা অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে নিজে বাজারের ব্যাগে করে নিজ বাগায় নিয়ে যান। যা শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ অবগত আছেন ।
২০২৪ বছর এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের প্রত্যেকের নিকট হতে বিনা রশিদে ৮৭ হাজার টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করে। যা শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ অবগত আছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কল্যাণ তহবিল ও শিক্ষক সংসদ তহবিলের টাকা অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে প্রায় ১৭ লাখ ৫০হাজার টাকা স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায় ভাবে তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে ও শিক্ষকদের বেতন ভাতার কথা বলে ধার নিয়ে তা পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলো হতে টাকা উত্তোলন করেন কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কল্যাণ তহবিল ও শিক্ষক সংসদ তহবিলের ফান্ডে জমা না দিয়ে
নিজেই আত্মসাৎ করেন। এ জন্যে তিনি কোন মিটিং বা রেজুলেশনের তোয়াক্কা করেন নি।
অভিযোগ ওঠেছে, অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন নেন এবং তার নিকটতম সহকারী প্রধান শিক্ষককে বেতন দেন ১৬ হাজার টাকা এবং অন্যান্য শিক্ষকগন আরও কম বেতন পান । যা বহগুন বেশি বলে বেতন বৈষম্য তৈরি করে রেখেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পশ্চিম পাশের্^র ভবনের পশ্চিম পাশে অবৈধ ভাবে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে ও গভর্নিং বডির সভাপতি মোঃ জোয়াহেরুল ইসলাম অর্থ আত্মসাতের পন্থা হিসাবে মার্কেট (দোকান) তৈরি করেন। যার দরুন পশ্চিম পাশের ভবনটির পশ্চিম পাশের সবগুলো জানালা সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উক্ত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ ক্লাশ নিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন।