বরেণ্য নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের সহধর্মিণী, বাংলা নাটকের নিঃশব্দ পথচারী, গওহর আরা মামুন মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ধানমণ্ডিতে চিকিৎসাধীন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন নাট্যকর্মী সাম্য রহমান। তিনি জানান, মরহুমা গওহর আরা মামুন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানান অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
তার জানাজা বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর, ধানমণ্ডির তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তার লাশ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় সবার দোয়া প্রার্থনা করেছে তার পরিবার। মৃত্যুকালে তিনি তার পরিবার-পরিজনসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
প্রসঙ্গত, মামুনুর রশীদ ও গওহর আরা মামুন দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমাদের নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের সহধর্মিনী গওহর আরা মামুন (টুলী ভাবি) আজ (মঙ্গলবার) পরলোক গমন করেছেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
“বৃহত্তর আরণ্যক পরিবারের সকল সদস্যের কাছে টুলী ভাবি ছিলেন মাতৃসম। শাসনে আর আদরে আরণ্যক পরিবারকে অতি আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। আজ আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত। ভাবি যেন পরপারে অপার শান্তি লাভ করেন। মাতৃসম টুলী ভাবির স্নেহের স্পর্শ যেন আরণ্যক পরিবারের সকলের জন্য চির আশীর্বাদ হয়ে থাকে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, টুলী ভাবি যেন বেহেস্তবাসী হন।”
আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য ও থিয়েটার পত্রিকা ‘ক্ষ্যাপা’র নির্বাহী সম্পাদক অপু মেহেদী বলেন, ” গওহর আরা মামুন আমাদের মাতৃস্নেহে ভালোবাসতেন। এ জন্য মামুন ভাইয়ের বাসাটা আমাদের নিজেদের বাসা মনে হত। নাট্যকর্মীদের কাছে ভীষণ আপনজন ছিলেন তিনি।”
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমাদের সকল নাট্যকর্মীর ভাবি, মামুনুর রশীদ ভাইয়ের স্ত্রী গহর আরা মামুন (টুলি ভাবি) চলে গেলেন। কত স্মৃতি, কত কথা মনে হচ্ছে! মানুষের জীবন কত ছোট, কত সংক্ষিপ্ত এ সফর তা কেউই আমরা একটিবারও ভাবি না।”
গওহর আরা মামুনকে ভীষণ সংসারি মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে শাহনাজ খুশি বলেন, “তিনি ছিলেন ঠিক মামুন ভাইয়ের বিপরীত। মাতৃত্বের এক বাঁধানো ফ্রেম যেন। আরণ্যক থিয়েটারের ছোট-বড় সব সদস্য তার সে মাতৃত্বের শাসন এবং সোহাগ পেয়েছে। থিয়েটারের সদস্যদের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে এক সময় ৪৭/১ এর ইন্দিরা রোডে ভাবির বাড়িতে। সব ভেঙে নতুন করে হয়ত গড়া যায়, শুধু স্মৃতির পুনর্গঠন সম্ভব না। আপনি আরণ্যক তথা সকল থিয়েটারের সন্তানদের মনের কোনে বেঁচে থাকবেন।”