বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সমাজের সব স্তরে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। বরিশালে আদালতের ৪৭ জন বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগ মামলার নিষ্পত্তি করেছেন। কিছু কিছু বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগের বেশি নিষ্পত্তি করেছেন। এতে প্রমাণ হয়, জন আকাক্সক্ষার নতুন যে বাংলাদেশের পথে আমরা হাঁটছি তা পূরণে বিচার বিভাগ আস্থা ও সততার সঙ্গে কাজ করছে।
৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে বরিশাল আদালতপাড়ায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, একজন বিচার প্রার্থী আইনজীবীদের কাছে আসে ন্যায় বিচারে সহায়তার জন্য। আমি বিশ্বাস করি বরিশালের আইনজীবীরা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আইনজীবীদের পড়াশুনার শেষ নেই। আপনাদের আইনের সবশেষ আপডেট জানতে হবে। আপনার জ্ঞান ও সততার মাধ্যমে কাজ করতে পারেন তাহলে সফলতা আপনাকে খুঁজে নেবে।
তিনি আরও বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে সততার সঙ্গে আদালতকে সহায়তা করা। বিচার বিভাগের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে আমরা জড়িয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এর আগে সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত’সহ অন্য আদালত পরিদর্শন করেন তিনি। বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক শোষণহীন সমাজ গঠন ও সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। আইন পেশায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আইন পেশায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সততা, ধৈর্য ও পরিশ্রম। একজন আইনজীবীর পড়ালেখার কোনো শেষ নেই। আইনের সর্বশেষ সংশোধন সম্পর্কে আইনজীবীদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
সোমবার রাতে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে অ্যানেক্স ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্ট অফিসার’ হিসেবে আইনজীবীদের প্রথম কর্তব্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালত ও আইনের বিধিবিধানের ওপর পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতকে সহযোগিতা করা। বিচার বিভাগের সম্মান বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ডে যেন আইনজীবীরা জড়িয়ে না যান, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের মানুষ চিরকাল গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। যাঁরা একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য তাজা বুলেটের সামনে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিলেন।
বরিশালের আদালতের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বরিশালের আদালতে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৭ জন বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। কিছু কিছু আদালতের বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগের বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। পরিসংখ্যান অনুসারে এ বছর বরিশালে ৮ হাজার ৯২৪টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিপরীতে ৮ হাজর ৯৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে পৃথক্করণের জন্য পৃথক বিচার সচিবালয় গঠনের কথা বলেছেন তিনি। বিচার বিভাগকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন, বিচারপ্রার্থীদের সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এবং আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বারবার আসতে না হয়। তবে এ বিষয়টি বিচারকদের একার ওপর নির্ভর করে না। এ জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খান মোহাম্মদ মোর্শেদ।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল সফরে আসেন। ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও অন্যান্য আদালত পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ’সহ অন্য আদালতের বিচারকেরা প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রধান বিচারপতি আদালত প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।