টাঙ্গাইলের মধুপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ বনবাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১২৯টি মামলা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এছাড়া সেখানকার শালবনে আবারও শাল গাছ রোপণের ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, শালবনে আবার শাল গাছ ফেরত আনা হবে। তাই আসন্ন বর্ষায় বেশি বেশি শাল গাছ রোপণ করতে হবে। এখানে যারা বনবাসী আছেন তাদের এই বন রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সকল কাজে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বনে যে জায়গা বেদখল আছে সেগুলো চিহ্নিত করতে সীমানা পিলার দেয়া হচ্ছে। রোববার (২৫ মে) দুপুরে টাঙ্গাইল বনবিভাগের আওতাধীন মধুপুর উপজেলার টেলকি এলাকায় শাল গাছের চারা রোপণকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, শালবনে বাণিজ্যিকভাবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশিয়া গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সেগুলো ক্রমান্নয়নে বন্ধ করা হবে।
এছাড়া মধুপুর বনাঞ্চলের রাজাবাড়ী এলাকায় সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ পরিদর্শন ও সীমানা পিলার স্থাপনের মাধ্যমে ‘স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে মধুপুর শালবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ প্রকল্পের কার্যক্রমও উদ্বোধন করা হয়। এরপর তিনি মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ময়ূর অবমুক্ত করেন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জনসেবা চত্বরে বেলুন উড়িয়ে টাঙ্গাইলের ভূমি মেলার উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। সকালে পরিবেশ উপদেষ্টা জনসেবা চত্বরে দুটি গাছের চারা রোপণ করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃতিকে আমরা বিরক্ত করে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গাছ কেটে বলি, ‘২০ হাজার গাছ কেটে ৪০ হাজার গাছ লাগাবো।’ এজন্য আমাদের এতো বড় বড় বিপত্তি হয়। আপনি কিছু প্রাকৃতিক অবস্থায় ফেরত আনতে পারেন, কিন্তু সবটা ফেরত আনতে পারবেন না। বাংলাদেশ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হওয়ারই দরকার ছিল না। আমরা এতোই প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিলাম। আমরা এমন অত্যাচার করলাম প্রকৃতিকে, এখন আমাদের তা সংশোধনের কাজ করতে হচ্ছে। আজকের এই কাজটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ধ্বংস প্রায় প্রাকৃতিক অবস্থায় এটিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।
তিনি আরও বলেন, যে পাঁচ লাখ গাছ লাগানো হবে, তা দেশীয় গাছ নির্বাচন করা হয়েছে। এই গাছগুলো প্রচুর পরিমাণে প্রাণীদের আশ্রয় দেবে। এই গাছগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সবুজ করার জন্য নয়, আমরা ভালো অক্সিজেন পাবো, দূষণ কমবে, পাখির আশ্রয় হবে। যারা এই গাছগুলো লাগাবে, তাদের গাছের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক হয়ে যাবে। আমরা গাছগুলো লাগিয়েই বসে থাকবো না, সেগুলোর যত্ন ও পরিচর্যা করবো। আমাদের ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন প্রক্রিয়া সেখান থেকে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
এ সময় টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান, প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী’সহ বনবিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।