অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে টাঙ্গাইলের যোগ্য ৫ জন কৃতি সন্তান। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর , তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলায়। সোনালী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শওকত আলী খান, তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায়। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো. নুরুল হক ,তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, উপজেলায়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান, তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি, উপজেলায়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, উপজেলায়।
টাঙ্গাইল জেলার কৃতি সন্তান যোগ্য ব্যক্তিবর্গের এই তালিকায় বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় জন্ম নিয়েছেন বা বসবাস করেছেন কিংবা পৈত্রিক নিবাস এখানে এমন ব্যক্তিদের নাম সন্নিবেশ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রিটিশ বাংলাদেশি, মার্কিন বাংলাদেশি, কানাডীয় বাংলাদেশি এবং টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী অন্যান্য অনাবাসী বাঙালিও রয়েছেন। এসব ব্যক্তি টাঙ্গাইলা হিসাবেও পরিচিত হতে পারেন।
ইতিহাস ভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা হলো বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার একটি, যা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমা থেকে ৯৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ সদর মহকুমা থেকে ২৪৩৯ বর্গকিলোমিটার জমি নিয়ে বর্তমান টাঙ্গাইল জেলাটি তৈরি করা হয়। উপজেলার সংখ্যা অনুসারে টাঙ্গাইল বাংলাদেশের “এ” শ্রেণীভুক্ত একটি জেলা। জেলাটির মোট আয়তন ৩৪১৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা। ১৯৬৯ সাল অবধি টাঙ্গাইল ছিল অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। এটি একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবহমান।
টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা হতে প্রায় ৮৪ কি মি দূরে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৪১৪.৩৮ বর্গ কি.মি.। এই জেলার উত্তরে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও মানিকগঞ্জ জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা। এই জেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে আবহমান যমুনা নদী বয়ে চলেছে।
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তার মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানের নামে ‘আইল’শব্দের আধিক্য আছে (যেমন- বাসাইল, ঘাটাইল, ডুবাইল, নিকরাইল, রামাইল ইত্যাদি)। অনেকের ধারণা টাঙ্গাইলের অন্য স্থানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনা প্রবাহে ‘টাঙ্গাইল’নাম হয়েছে। টং শব্দের ফরাসী অর্থ উঁচু। আর আইল হচ্ছে আবাদী জমির সীমানা সংলগ্ন অংশ। এখানকার মানুষ বসবাসের জন্য মাটির উপর বাঁশ পুঁতে টং ঘর নির্মাণ করতো। টং ফরাসী শব্দ, অর্থ হলো উঁচু। অতীত সময়ে স্থানীয় অনার্য বাসিন্দারা বাসস্থানকে ‘ইল’বলতো। টাঙ্গাইল জেলা প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়ের উঁচু ভূমি ও নিকটবর্তী কৃষি জমির সমাহার। এই উঁচু ভূমি বা টং ও জমির ‘আইল’এই দুইয়ের সমন্বয়ের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের এলাকার নাম টাঙ্গাইল হয়েছে। টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। আরেক জনশ্রুতিতে রয়েছে, নীলকর টেংগু সাহেবের গল্প এবং এটিই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ব্রিটিশ শাসনের প্রায় প্রারম্ভে আকুরটাকুর ও শাহবালিয়া মৌজার মধ্যবর্তী এলাকায় টেংগু সাহেবের নীল চাষ ও নীলের কারখানা ছিল। পূর্বোক্ত দুই মৌজার সীমানা বরাবর তিনি উচু মেটোপথ বা আইল যাতায়াতের জন্য তৈরী করেছিলেন। কয়েকজন সাধারণ এই আইলকে টেংগু সাহেবের আইল বলে উল্লেখ করতো। সুতরাং অনুমান করা হয় যে, টাঙ্গাইল শব্দটি টেংগু সাহেবের আইল নামেরই অপভ্রংশ।