টাঙ্গাইল পৌরশহরের প্রতিটি সড়কেই আগের যেকোন সময়ের তুলনায় কয়েকগুন বেশি চলছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চলছে। অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়সের চালকদের কারনে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় ডান-বাম না দেখে কিংবা কোন ধরণের সিগন্যাল না মেনে এক পায়ের উপর ভর করে এই যান্ত্রিক রিকশা যত্রতত্র ঘুড়াতে গিয়ে উল্টে যায়। রিকশা থেকে পরে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা।
শহরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে এসব অটোরিকশার গ্যারেজ। ভোর থেকে রাত ১২ টা অব্দি চলে অটোরিকশা। এসব গ্যারেজে প্রায় সারা রাত ব্যাটারী চার্জ দেওয়ার কাজ চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে চার্জ দেয়া হয়। চার্জ পূর্ণ হলে চালকরা সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। সারারাত চার্জ দেবার ফলে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর ফলে শহরে অসহনীয় লোডশেডিং ঘটে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন এস এম সিরাজুল হক আলমগীর। তিনি ২০২১ সালের ১১ মার্চ টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ২০২২ সালের ২৮ফেব্রয়ারিতে ১ হাজার ১ শ টি , ২০২২ সালের ২৮ জুন ১ হাজার ১ শ টি, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পুনরায় ২ হাজারটি এবং ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারী ১ হাজার ৮ শসহ মোট ৬ হাজার রিকসার অনুমতি প্রদান করেন। সাবেক মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ৩ হাজার ২২০ টি ইজি বাইকের চালককে ও ২ হাজার ৪৩৪ টি রিকসা চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করেন।
শহরের আদি টাঙ্গাইল ও বাজিতপুর এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে শেরপুর, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আসলাম, হুমায়ন, জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন ব্যাটারী চালিত রিকশা চালকের সাথে কথা হয় । তারা জানান, শহরে এসব রিকশা চালানো অবৈধ, তবুও পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাই। ভাড়া বেশি হওয়ায় টাঙ্গাইল শহরে রিকশা চালিয়ে ভালোই আয় হয়। রিকশা চালিয়ে স্ত্রী-সন্তানের মুখে চারটে ডালভাতের ব্যবস্থা করতে পারছি।
অটোরিকশা চালক শাহজাহান বলেন, আমি আগে সরিষাবাড়ি এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। এ কাজে উপার্জন কম হওয়ায় আমার বন্ধু মানিকের পরামর্শে টাঙ্গাইল শহরে অটোরিকশা চালাতে এসেছি। এ শহরে রিকশা ভাড়া বেশি হওয়ায় সারাদিনে ভালোই আয় হয়। গ্যারেজ ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েও দিন শেষে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা রোজগার করা যায়।
শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল শহরের আদি টাঙ্গাইল, বাজিতপুর, কাজীপুর,বালুচড়া, বেবীস্ট্যান্ড কান্দাপাড়া এলাকা, কলেজপাড়া, বেড়াডোমা, নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, কোদালিয়া, সাবালিয়া, বৈল্ল্যা বাজার এলাকা, আশেকপুর, রাবনা বাইপাস এলাকায় বিভিন্ন পরিত্যাক্ত ও অব্যবহৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে শত শত রিকশার গ্যারেজ।
এসব গ্যারেজে রাতের বেলা অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ দেয়া হয় প্রতিটি রিকশা। এতে প্রতিদিনের বিদ্যুতের একটা বড় অংশ চলে যায় রিকসা র্চাজে। সাধারণত একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা চালানোর জন্য ১২ ভোল্টের ৪টি ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতিটি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য মাসে বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩ শত থেকে সর্বোচ্চ ৪ শত ইউনিট পর্যন্ত। যে কারনে বিদ্যুতের ঘাটতি পরছে সাধারণ নাগরিক জীবনে।
সরকারি কুমুদিনী মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের শির্ক্ষাথী ইতি, সাদিয়া, তমা বলেন, আমাদের এ ছোট শহরে এতো রিকসার প্রয়োজন নাই। ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে আধা ঘন্টা লাগে। ভাড়্ওা অনেক বেশি। অসহনীয় যানজট এড়াতে শীঘ্রই এ অবৈধ রিকসা তুলে দেওয়া হোক। পথচারী আহাদ মিয়া বলেন, রিকসার যন্ত্রণায় শহরে পথচলা দায়। এতো ছোট জায়গায় এতো যানবাহন কি দরকার? এসব অবৈধ যান বন্ধ করার জন্য জোড় দাবি জানাই।
গৃহিনী সোমা আক্তার জানান, প্রয়োজনে রিকসা অনেক কাজে আসে। তাই বলে এতো রিকসা ! এতো রিকসার দরকারতো আমাদের নাই। মাঝে মাঝে র্দূঘটনাও ঘটে। যারা শহরে রিকসা চালান তারা অনেকেই ভাড়া জানেন না।ভাড়ার কোন চার্টও শহরে কোথাও দেখি না। তারা আন্দাজ করে ভাড়া দাবী করে। মহিলা যাত্রীদের সাথে রাস্তায় ঝগড়া করে। মানসম্মানের ভয়ে ভাড়া যা চায় তাই দিয়ে থাকি।
টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অটোরিকসা অবৈধ। সড়ক পরিবহন আইণ ২০১৮ অনুযায়ী এসব যানবাহনের কোনরূপ বৈধতা নাই। পৌরসভা বা সিটি র্কপোরেশন এসব অটোরিকসার লাইসেন্স দিয়ে থাকে। যাদেরকে লাইসেন্স দেয় তারা ট্্রাফিক আইন-কানুন জানে না। রাস্তার কোথায় র্পাক করা যাবে বা কোথায় থামা যাবে আর কোথায় থামা যাবে না এ বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নাই। আসছে জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ বিষয়ে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এডমিন (টিআই-১) মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল পৌরবাসীর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অটো রিকসা রয়েছে। জেলা পুলিশ সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে যানজট মুক্ত টাঙ্গাইল গড়তে ট্রাফিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট নিরসনে আলোচনা চলমান আছে। আশা করছি শীঘ্রই যানজট থেকে আমরা মুক্ত হবো।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, যানজট নিরসনে ব্যাটারী চালিত অটো রিকশার বিষয়ে পৌরসভাসহ সবার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।